সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন

সুদ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস

নৈতিক শিক্ষা ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৪১৬ পঠিত
সুদ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস

দুনিয়ার জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা কিংবা বাসস্থান; তথা মৌলিক চাহিদা পুরণ করার জন্য মানুষকে উপার্জন করতে হয়। ইসলামে দৃষ্টিতে ও সার্বিক বিবেচনায় উপার্জনের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্যবসা সর্বোত্তম। এজন্যই প্রত্যেক নবীই কোনো না কোনো ব্যবসা করতেন। ব্যবসা সর্বোত্তম পেশা হলেও ইসলামে সুদকে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। সুদ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

সুদ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত

১. আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সুরা আল বাকারাহ,আয়াত নং ২৭৫)

২. আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। – সুরা আল বাকারাহ,আয়াত নং ২৭৬।

৩. হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। – সুরা আল বাকারাহ,আয়াত নং ২৭৮।

৪. অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। – সুরা আল বাকারাহ,আয়াত নং ২৭৯।

৫. হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। – সুরা আল ইমরান,আয়াত নং ১৩০।

৬. আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব। – সুরা আন নেসা, আয়াত নং ১৬১।

৭. মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে। – সুরা আর রূম,আয়াত নং ৩৯।

সুদ সংক্রান্ত হাদীস

১. মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, দু’ব্যাক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যাক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি নদীতে (রক্তের) দেখেছেন, সে হল সুদখোর। – সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ক্রয়-বিক্রয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৯৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৫।

২. আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাতটি ধ্বংসকারী কর্ম হতে দূরে থাক।’ সকলে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তা কী কী?’ তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শির্ক করা, যাদু করা, ন্যায় সঙ্গত অধিকার ছাড়া আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা হারাম করেছেন তা হত্যা করা, সূদ খাওয়া, এতীমের মাল ভক্ষণ করা, (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) যুদ্ধের দিন পলায়ন করা এবং সতী উদাসীনা মুমিনা নারীর চরিত্রে মিথ্যা কলঙ্ক দেওয়া। – সহীহ বুখারী, অধ্যায় : ওয়াসিয়াত, হাদীস নং ২৭৬৬ ও সহীহ মুসলিম।

৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ (রঃ)…..আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সবচেয়ে নিম্নটি হল-নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা। (ইবনে মাজাহ)।

৪. হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি এমন এক গোত্রের পাশ দিয়ে গমন করি,যাদের পেট ছিল ঘরের মত বড়, যার মধ্যে বিভিন্ন রকম সাপ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হল সুদখোর। (ইবনে মাজাহ)

৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ।  (মুসনাদে আহমদ)।

৬. আহমদ ইবন ইউনুস (রহঃ) …. আবদুল্লাহ্‌ ইবন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদখোর, সূদদাতা, এর সাক্ষী এবং সূদের দলীল লেখক- সকলের উপর লা’নত করেছেন। (আবু দাউদ, অধ্যায়: ক্রয়-বিক্রয়: ৩৩০০)।

৭. হযরত আব্বাস ইবনে জাফর (রঃ)…..ইবনে মাসউদ (রাঃ) সুত্রে রাসূল (সাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে বেশী সুদ খাবে, পরিনামে তার সম্পদ কম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একই ধরনের আরও সংবাদ
© Current Memory 2022 - 2023
Designed by BLACK iz Limited