আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় ভাত, মাছ, মাংস, সবজি কিংবা ফল-মুলের সাথে বেকারি পণ্য তথা রুটি, বিস্কুট, কেক, চানাচুর, টোস্ট কিংবা কুকিজ ইত্যাদি খাবারগুলো প্রায় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ধনী কিংবা গরীব সবারই এই পণ্যগুলোর প্রয়োজন পড়ে। ইদানীং বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিবেশিত পণ্যে যুক্ত করেছে ফাস্টফুড, মিষ্টি এবং হরেক রকম স্বাদের খাদ্য। এগুলো ছাড়া অতিথি আপ্যায়ন, জন্মদিন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা তো ভাবাই যায় না। এগুলোর দাম সব ধরনের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় স্বল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করা যায়। নিজের পাশাপাশি তৈরি করা যায় বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান।
প্রশিক্ষণ
যেকোন ব্যবসা শুরু আগে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নেয়া ভালো। এতে করে সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। সরকারের এসএমই ফাউন্ডেশনও বেকারি পণ্য তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, যা মানসম্পন্ন খাদ্য তৈরি, প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত উপাদান, খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কাজে লাগে। তবে এসব কাজের ক্ষেত্রে ভালো প্রতিষ্ঠানে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিলেই ভালো হয়। এজন্য বিভিন্ন কারখানা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বেসরকারিভাবেও এখন অনেক জায়গায় এসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।
প্রাথমিক পুঁজি
প্রশিক্ষণ বা এই ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার ব্যবসার আকার কেমন হবে। সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার কত পুঁজি লাগবে। এক্ষেত্রে আগে বেকারি ব্যবসায়ী এবং যে সব প্রতিষ্ঠান বা দোকানে পণ্য সরবারহ করবেন তাদের সঙ্গে কথা বলে নিলে এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। চাইলে বড়সড় কারখানা দিতে পারেন, আবার শুরু করতে পারেন ছোট পরিসরেও। প্রথমেই কারখানা ভাড়া নিয়ে মিক্সচার মেশিন, ওভেনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে হবে। স্বল্প পরিসরে শুরু করলে প্রথমে একটি ছোটখাটো কারখানা আর চার-পাঁচজন দক্ষ কর্মচারী নিলেই চলবে। এরপরে প্রয়োজন অনুপাতে কর্মচারীর সংখ্যা ও কারখানার পরিসর বাড়ানো যেতে পারে। পণ্য সরবারহ করার জন্য ভ্যানের প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে একটা বেকারির ব্যবসা দাঁড় করাতে মোটামুটি ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা লাগতে পারে।
প্রশিক্ষণ ও পুঁজি নেয়ার পর আপনাকে ট্রেড লাইসেন্সসহ প্রয়োজনী কাগজপত্র করে নিতে হবে। যাতে কোন ধরনের ঝামেলায় আপনাকে পড়তে না হয়।
আপনার একটি কারখানাতেই বিস্কুট, কেক, বিভিন্ন ধরনের রুটিসহ সব ধরনের বেকারি পণ্য বানাতে পারেন। প্রাথমিকভাবে বিস্কুট তৈরিতে লাগবে ওভেন, বিশেষ ধরনের টেবিল, ছাঁচ, পাতা মেশিন (যেখানে বিস্কুট কেটে রাখা হয়) এবং মিক্সচার মেশিন। কেক বানাতে লাগবে ছাঁচ, বিশেষ ধরনের কাগজ, ছুরি। পাউরুটি বানাতে কিনতে হবে এক বা দুই পাউন্ডের ছাঁচ ও ব্রাশ। এসব যন্ত্রপাতি রাজধানীর বংশাল, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় ভারত ও চীন থেকে। এছাড়াও লাগবে প্যাকেটজাত করা মেশিন, আটা, ময়দা, চিনি, তেল, ডালডা, মাখন, ব্রেকিং পাউডার, ব্রেকিং সোডা, কস্টিক পাউডার, কনফ্লাওয়ার পাউডারসহ প্রয়োজনীয় পণ্য।
আরও পড়ুন : ব্যবসা শুরুর আগে নিতে পারেন প্রশিক্ষণ
বাজারজাতকরণ
বেকারি ব্যবসায় বাজারজাতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী দক্ষ লোক রাখতে হবে, যারা বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহ করবেন। এছাড়া বড় হাসপাতাল, কর্পোরেট অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পণ্য সরবরাহ করা গেলে ব্যবসা বাড়বে। আবার ব্যবসা বাড়লে নিজেদের শো রুম নিয়ে সেখানেও বিক্রি করা যেতে পারে।
উৎপাদন ব্যয় ও লাভ
সাধারণত আট কেজি বিস্কুট বানাতে প্রায় এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার পাঁচশ খরচ হবে। বিক্রি করা যাবে প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। লাভ হবে প্রায় এক হাজার থেকে বারোশ টাকা। এভাবে অন্যান্য পণ্য থেকেও ভালো লাভবান হওয়া সম্ভব। মাঝারি একটি কারখানা থেকে সব খরচ বাদে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি আয় করা সম্ভব।
সাবধানতা
বিস্কুট, রুটি, কেক, প্যাটিস, চানাচুর, টোস্ট, কুকিজসহ সকল পণ্য উৎপাদনের ক্ষে সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে। পণ্যের গুণগত মানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একবার বাজারে সুনাম পেয়ে গেলে যেমনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য অর্জন করা যায়, ঠিক তেমনি দুর্নাম হলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রথম দিকে লাভ কম করে হলেও সুনামের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।
⇒ নতুন নতুন আইডিয়সিহ ব্যবসা সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন
Alhamdulillah. Very good job. All time inspire this link