সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

কায়েস হোসেন: দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ার কারিগর

রোমাঞ্চ তালুকদার
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১২০০ পঠিত
কায়েস হোসেন: দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ার কারিগর
কায়েস হোসেন: দক্ষ ফ্রিল্যাসার গড়ার কারিগর

২০২০ সালে করোনাকালে দেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কল সেন্টারে রিক্রুটমেন্ট করা হবে। কল সেন্টারের তরুণ নির্বাহী কর্মকর্তা বিস্মিত হয়ে দেখলেন, ১০ জন প্রার্থীর বিপরীতে আবেদন জমা পরেছে প্রায় ৮ হাজার। সে সময়ে অনেক কোম্পানিই কর্মী ছাটাই করছিলো। সেখানে তিনি ১০ জনের কর্মসংস্থান করতে পারছেন ভেবে ভালো লাগছিলো। কিন্তু বাকিদের জন্যও তার মন খারাপ হলো। চিন্তা করতে লাগলেন কি করা যায়, এদের মত শিক্ষিত বেকারদের জন্য। তখনই মাথায় এলো ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা, কিন্তু নিজে তো ফ্রিল্যান্সিংয়ের কিছুই জানেন না! তাহলে অন্যদের কীভাবে সাহায্য করবেন! এমন ভাবনা থেকেই তার মাথায় জেদ চাপল, কোভিড সময়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুযোগে অফিসের কাজের পাশাপাশি ডুব দিলেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের দুনিয়ায়। তারপর ডুব থেকে যতোদিনে উঠলেন ব্যাক্তিগত একাউন্টে ততদিনে জমা হয়ে গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ডলার! ডাটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করলেও নিজেই আয়ত্ব করলেন নিত্য নতুন সব স্কিল।

এরপর শুরু করলেন নতুন মিশন- দক্ষ বেকারদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুললেন একটি ওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট নেটওয়ার্ক। ব্যাংকের চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়েও পেয়েছেন সাফলতা। নিজের তত্ত্বাবধায়নে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশে এবং দেশের বাইরের দশ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দিলেন। তাদের বেশিরভাগই এখন সফল ফ্রিল্যান্সার। বলছি, কায়েস হোসেন-এর কথা। যিনি নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি অন্য বেকারদেরকেও সাফল্য পেতে করেছেন প্রত্যক্ষ সহায়তা।

শুরুর কথা

শরিয়তপুরে জন্ম নেয়া কায়েস হোসেন বাবার কাজের সুবাদে বেড়ে উঠেছেন টঙ্গিতে, সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন টঙ্গি সরকারি কলেজ থেকে। কর্ম জীবনে বেশ কয়েকটি মুঠোফোনের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এখন কর্মরত আছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তিনি এখন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার গড়ার কারিগর।

তার দৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি স্বাধীন পেশা যেখানে আপনি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন। এটি অনেকটা সাধারণ চাকরির মতোই, তবে ভিন্নতা হলো এখানে আপনার কাজ আপনি স্বাধীনভাবে করতে পারবেন। ধরাবাঁধা কোনো অফিস টাইম নেই বলে আপনার কাজের সময় আপনি নিজেই নির্ধারণ করে নিতে পারছেন। ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো ইমপ্লয়ার নেই, যখন যে বায়ার আপনাকে কাজ দিবে তখন সে-ই আপনার ইমপ্লয়ার।

সাধারণ চাকরি থেকে আরেকটি বিষয়ের ভিন্নতা হলো- আপনার নির্দিষ্ট কোন অফিসে গিয়ে কাজ করতে হবে না, তার বদলে আপনার নিজের বাড়িতে বসেই যেকোন দেশের বায়ারদের সাথে সরাসরি কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সহজেই অন্য যে কোন চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করা সম্ভব, যদি আপনার যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে। অর্থাৎ চাহিদাসম্পন্ন কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনি বাইরের দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

কায়েস হোসেনের সঙ্গে যুক্ত হবেন যেভাবে

কায়েসের ভাষায় বৈশ্বিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের এই মার্কেটে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ আনুপাতিকভাবে খুবই সামান্য। তাই শিক্ষিত বেকারদের একসুতোয় গাঁথতে এবং ফ্রিল্যাসিংয়ে আগ্রহী করে তুলতে Youtube.com/allaboutfreelancing নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেন। সেখানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ধারনা দিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে ভিডিও আপলোড শুরু করলেন। একসময় ইউটিউবে তার অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে লাগল, মানুষের জানার আগ্রহ, প্রশ্ন, সমস্যা ও সমাধানে https://t.me/ytsupportgroup নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ খুললেন। ফ্রিল্যাসিং শিখতে আগ্রহী যেকেউ চাইলেই এই গ্রুপে সংযুক্ত হয়ে সম্পুর্ণ বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে।

কায়েসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে বেশ সাফল্য পাচ্ছিলেন, তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা গেলো। অনেকেই আবার ইংরেজি ভাষাগত দূর্বলতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার অভাবে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছিলেন না। এ সমস্যার সমাধানে আবারও এগিয়ে আসলেন কায়েস। প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ড্রিম ডুয়ার্স ডট নেট’ নামে একটি কার্যকরী ওয়ার্কিং নেটওয়ার্ক। যোগাযোগ দক্ষতা ও ইংরেজি দূর্বলতার কারণে এতদিন যারা কাজ পাচ্ছিলেন না, এবার তাদের জন্য সুযোগ তৈরি হলো। এই প্লাটফর্ম এ সংযুক্ত রয়েছে প্রায় দু’হাজারের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দক্ষ ফ্রিল্যান্সার। যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছে। দক্ষতা অর্জনে ইচ্ছুক বা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আগ্রহী যেকেউ চাইলেই যুক্ত হতে পারবেন ড্রিম ডুয়ার্স-এর সাথে।

‘ফ্রিল্যান্সারদের দ্বারা, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য’- এই স্লোগানে বিশ্বাসী কায়েস আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে কাজ করে যেতে চান । ফ্রিল্যান্সিংকে সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজন করতে চান প্রশিক্ষণ কর্মশালার।

সফল মানুষ কায়েস হোসেন স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশের তরুণরা একসময় ফ্রিল্যান্সিংয়ে সবদেশের শীর্ষে অবস্থান করবে। চাকরির পেছনে না ঘুরে প্রচলিত চাকরির চেয়ে কয়েকগুন বেশি উপার্জন করবে। সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি যে সেটা করে দেখাতে পারবেন, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের আরও খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একই ধরনের আরও সংবাদ
© Current Memory 2022 - 2023
Designed by BLACK iz Limited