অনেকেরই স্বপ্ন থাকে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু ইচ্ছা, যোগ্যতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিক নির্দেশনা না পাওয়ার কারণে তাদের সেই স্বপ্ন পুরণ হয় না। সেই স্বপ্ন পুরণ করতে বছরের শুরু থেকে নানা ধাপে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ২০২৩ সালে যারা বিদেশে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে চান, তাদের প্রস্তুতির নানা প্রক্রিয়া নিয়ে আজকে আলোচনা করা হলো।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে পড়াশোনার প্রস্তুতি সঙ্গে সঙ্গে কাগজপত্র ও প্রক্রিয়াসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। বছরের শুরু থেকে পরিকল্পনা নিয়ে ধাপে ধাপে এ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
প্রস্তুতির প্রথম ধাপ: বছরভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বছরের প্রথম থেকেই একেকটি কাজের জন্য ‘টাইমলাইন’ ঠিক করে ফেলতে হবে। এরপর দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা, ভাষাসংশ্লিষ্ট দক্ষতার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক ও সম্মানজনক বৃত্তিগুলোর জন্য ৭.০ বা ৭.৫ আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বৃত্তিগুলোতে ৬.৫ স্কোরও গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) স্কোর লাগে। তাই বুঝে শুনে ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা দেওয়া উচিত। জার্মানি, ফরাসি, চীনাসহত নানা বিষয় শিখতে পারলে সেই ভাষাসংশ্লিষ্ট বৃত্তি পাওয়া সহজ হবে।
ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে যারা পড়তে চান, জিম্যাট (গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট) তাঁদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে পড়তে চাইলে জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনস) স্কোর দরকার। অধিকাংশ সময়ে নেতৃত্বের গুণাবলি, স্বেচ্ছাসেবক বা গবেষক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
⇒ যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ
এরপরেই শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, নম্বরপত্র ইত্যাদি জোগাড় করতে হবে। এ বিষয়টি শেষ মুহূর্তের জন্য ফেলে না রেখে সনদ সংগ্রহ করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এক্ষেত্রে হালনাগাদ পাসপোর্টও সংগ্রহ করে রাখা উচিত। বিদেশে স্কলারশিপের জন্য ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) ও লেটার অব রিকমেন্ডেশনও (এলওআর) খুবই জরুরি।
আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপাস লিখতে হয় নিজেকেই। এছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সুপারিশপত্রও নিতে হবে। ভাষা দক্ষতা বা জিআরই-জিম্যাটের স্কোর কম হলে ভালো সুপারিশপত্র কাজে দেয় অনেকসময়।
প্রস্তুতির দ্বিতীয় ধাপ: এই ধাপে বৃত্তির খোঁজ ও আবেদন করতে হবে। দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এই আবেদনপ্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে। অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বৃত্তির খোঁজ পাওয়া যায়। এ ছাড়া সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের কাছ থেকে ই-মেইল করেও বৃত্তির খোঁজ পাওয়া যায়। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে হালনাগাদ সরকারি বৃত্তির তথ্য পাওয়া যায়।
দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে থেকে বিভিন্ন দেশের স্কলারশিপের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো থেকেও পাওয়া যায় নানারকম বৃত্তির তথ্য।
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে বা পছন্দের বিষয়ে পড়তে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অফার লেটার জমা দিতে হয়। আবেদনের সময় পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ের নাম সংযুক্ত করতে হয়। পরে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হলে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন।
প্রস্তুতির তৃতীয় ধাপ: একজন শিক্ষার্থী স্কলারশিপের আবেদন করার পর তাকে সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হয়। মৌখিক সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি এ সব দেশের দূতাবাসও সাক্ষাৎকার নেয় অনেক সময়। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দূতাবাসের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সব সাক্ষাৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করলে অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হয়। স্টুডেন্ট ফাইল চালুর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সংকটের মুখে পড়েন অনেক সময়। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি জানিয়ে ই-মেইলে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
স্কলারশিপে ডেডলাইনের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আবেদন করতে হবে। নানা জটিলতায় অনেকেই সময়মতো আবেদন জমা দিতে পারেন না। তাই হাতে কিছুটা সময় নিয়ে আবেদন করা উচিত।
বছরভিত্তিক পরিকল্পনায় জানুয়ারি-মার্চ প্রয়োজনীয় সনদ, সুপারিশপত্র ও স্টেটমেন্ট অব পারপাস তৈরি করা যেতে পারে। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এই সময়গুলোতে ভাষা দক্ষতা সনদ আইইএলটিএস-টোয়েফলের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এই সময়গুলোতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করা যেতে পারে।
মার্চ-জুন সময়ে জিআরই-জিম্যাটসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা প্রস্তুতি ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। মার্চ-ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট ও বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখা ও আবেদন করা যেতে পারে।
আবেদনকারীদের জন্য কিছু দেশের সরকারি স্কলারশিপের লিংক দেওয়া হলো:
যুক্তরাষ্ট্র: foreign.fulbrightonline.org/apply
যুক্তরাজ্য: chevening.org/scholarship/bangladesh/
ইউরোপ: eacea.ec.europa.eu/scholarships/erasmus-mundus-catalogue_en
জার্মানি: daad.de/en/study-and-research-in-germany/scholarships/
চীন: campuschina.org
ভারত: a2ascholarships.iccr.gov.in/
→ স্কলারশিপের আরও তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন